ব্রি ধান ৮৭ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

ব্রি ধান ৮৭ আমন মৌসুমের একটি জাত যা ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। ধানের আকৃতি লম্বা ও চিকন হওয়ায় কৃষক ধানের দাম বেশি পেয়ে থাকেন, কারণ চিকন সাইজের ধানের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। ব্রি ধান ৮৭ জাতের জীবনকাল ১২৫ থেকে ১২৮ দিন পর্যন্ত। এই জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.০০ টন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে প্রতি হেক্টরে ৬.৫০ টন (প্রতি হেক্টর) পর্যন্ত ফলন হতে পারে।
ব্রি ধান ৮৭ এর বৈশিষ্ট্য
- ব্রি ধান ৮৭ জাতের পরিপক্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২২ সে.মি.।
- এই জাতের গাছের কান্ড অনেক শক্ত ও মজবুত যেকারণে ধানের গাছ লম্বা হলেও ঢলে পড়ার ভয় নেই।
- গাছের ডিক পাতা লম্বা, খাড়া ও চওড়া হয়।
- গাছের পাতার রং হালকা সবুজ।
- ধান পাকার সময় গাছের কান্ড ও পাতার রং সবুজ থাকে।
- ধান পাকার সময় ধানের ছড়া ডিগ পাতার উপরে থাকে এবং ধানের ছড়া অনেক লম্বা হয়।
- ধানের দানাগুলো চিকন ও লম্বা হয়।
- চালে ২৭% অ্যামাইলোজ থাকে।
- ১০০০টি পরিপুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.১ গ্রাম।
ব্রি ধান ৮৭ চাষ পদ্ধতি
- বীজতলায় বীজ বপন: বীজ বপন করার উপযুক্ত সময় হলো আষাঢ় মাসের ১ থেকে ২৩ তারিখ (১৫ জুন - ৭ জুলাই) পর্যন্ত।
- চারা রোপন: চারা রোপন করার সঠিক সময় হলো ২৩ আষাঢ় থেকে ৩১ শ্রাবণ (৭ জুলাই - ১৫ই আগষ্ট) পর্যন্ত।
- চারার বয়স: বীজ বপন করার পর ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে।
- রোপণ দুরত্ব: একটি চারা থেকে অপর চারার দুরত্ব হবে ২৫ × ১৫ সে.মি.।
- চারার সংখ্যা: প্রতিটি গোছায় ২ থেকে ৩টি করে রোপন করতে হবে।
- সার প্রয়োগ: নিচে এক বিঘা জমিতে কোন সার কত কেজি প্রয়োগ করবেন তার নিয়ম দেয়া হয়েছে।
- ইউরিয়া- ২৪ কেজি, এমওপি- ১৪ কেজি, ডিএপি- ৮ কেজি ও জিপসাম- ৯ কেজি (বিঘা প্রতি)।
- সমস্ত ডিএপি/টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম জমি তৈরির চূড়ান্ত চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- ইউরিয়া সার তিনটি সমান ভাগে তিন কিস্তিতে ব্যবহার করতে হবে।
- চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পর ১ম কিস্তি, ২৫ থেকে ৩০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ধান গাছ থেকে থোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন আগে ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
- ডিএপি সার প্রয়োগ করলে প্রতি কেজিতে ৪০০ গ্রাম কম ইউরিয়া ব্যবহার করবেন।
- আগাছা দমন: চারা রোপণ করার পর ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
- সেচ ব্যবস্থা: ধানের চাল শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে যথেষ্ট পানি থাকা দরকার। প্রয়োজন হলে সেচ দিয়ে পানি দিতে হবে।
- রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন: এই ধানের রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় (প্রচলিত জাতের তুলনায়)। তারপরেও যদি রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয় তাহলে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে (অনুমোদিত)।
- ফসল কাটা: ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলো কার্তিকের ১০ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণের ১ তারিখ (২৫ অক্টেবর - ১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত।